শিরোনাম

6/recent/ticker-posts

ঝিনাই নদী এখন ডাম্পিং স্টেশন


স্টাফ রিপোর্টার: 

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন সর্পিলাকার প্রকৃতির বেশ দীর্ঘ একটি নদী ‘ঝিনাই’। জামালপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর মধ্যে অন্যতম ঝিনাই নদী। প্রচলিত রয়েছে এক সময় প্রচুর পরিমাণে ঝিনুক পাওয়া যেতে এই নদীতে। স্থানীয়রা ঝিনুককে বলত ঝিনাই, আর এ কারণেই ‘ঝিনাই নদী’ নামেই পরিচিতি পায় নদীটি। তবে গত প্রায় এক দশক ধরে নদীটি তার চিরচেনা রূপ হারাতে শুরু করেছে। এক সময় স্রোতস্বীনি ঝিনাই নদীতে চলত ছোট-বড় নৌকা, ধরা পড়ত প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ। কালক্রমে ঝিনাই নদী তার যৌবন হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ঝিনাইয়ের উৎসমুখ থেকে কিছুটা ভাটিতে জামালপুর পৌর এলাকার কম্পুপুর গ্রামে নদীর তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে বর্জ্য শোধানাগার কেন্দ্র। কিন্তু শোধানাগারটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও শহরের বর্জ্য নিয়ে আসা হয় এখানে। নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য রাখার কথা থাকলেও কয়েক বছর ধরে ঝিনাই নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্যরে স্তুপে নদীর এই অংশটি ভারাট হয়ে উচু হয়ে গেছে। একদিকে যেমন ভরাট হচ্ছে নদী, অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। বর্ষাকালে নদীর পানির স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো নদীতে। এতে করে মাছসহ জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনায় দূষিত নদীর পানি দিয়ে চাষাবাদ করা দুরুহ হয়ে পড়েছে, উর্বরতা হারাচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষি জমি। এছাড়াও বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকাবাসী যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, তেমনি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে গোটা পরিবেশ। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় এখন নদীতে কোন স্রোতনেই, তাই শুধুই কচুরিপানা স্তর। ঝিনাই তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে এখন ধানসহ নানা ফলস চাষ করা হয়। চাষাবাদের কারণে নদীটি কোথাও কোথাও সরু হয়ে খাল ও নর্দমার আকার ধারণ করেছে। দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদী ভরাট করে নদীর তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। বেশকিছু জায়াগায় নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় নদীটি সরু হয়ে গেছে।

জামালপুর পৌর এলাকার রাসেল মাহমুদ (৩৩) বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ডাম্পিং স্টেশন দিয়েছে। কিন্তু নিদিষ্ট জায়গায় ময়লা না ফেলে নদীতে ফেলে। এই নদীতে মানুষ মাছ ধরে সংসার চালাত। কিন্তু ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলার জন্য নদীর মাছ সব মরে গেছে। এখন পানিতে নামলে শরীরে চুলকানি রোগ হচ্ছে। 

একই এলাকার কম্পুপুর গ্রামের মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, নদীর পাড়ে ডাস্টবিন দিয়েছে চাষের জমিতে। কোটি টাকা খরচ করে বড় আকারে ডাস্টবিন দিয়ে ভিতরে ময়লা ফেলে না, ময়লা ফেলে নদীতে। বন্যা হলেই কৃষকের জমিতে সব ময়লা চলে যায় এতে করে আমাদের ফলন কম হয়।

আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা ফাউন্ডেশন (আসফ) এর সভাপতি মো: আক্তারুজ্জামান বলেন, ঝিনাই নদীর উৎসমূখের কাছে ডাম্পিং স্টেশনের আবর্জনা নদীকে দূষিত করছে। বিভিন্ন করণে ভারাট হয়ে যাওয়ায় নাব্যতা না থাকায় নদীটির স্বাভাবিক গতি নেই। এতে করে অনেকেই নদী দখল শুরু করেছে। 

জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক এ.কে.এম আব্দুল্লাহ-বিন-রশিদ বলেন, বর্জ্য শোধানাগার কেন্দ্রের নির্ধারিত জায়গায় বর্জ্য ফেলার কথা। কিন্তু পাশের ঝিনাই নদীতে যারা বর্জ্য ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্জ্য ফেলা হলে তা পরিষ্কারের জন্য পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নদী খননের বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নকিবুজ্জামান খান জানান, ঝিনাই নদী খননের বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এখনো খনন কাজ শুরু হয়নি, খুব শীঘ্রই নদী খনন শুরু হবে।  

জামালপুর ট্রিবিউন/ আবু সাঈদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ